রমজানের পাঁচটি শিক্ষা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

দ্বিতীয় হিজরীর সাবান মাসে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং তার পরের মাস রমজান থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার ফরজ সিয়াম চালু হয় ইবনে জারির বর্ণনা করেছেন যখন রোজার নির্দেশে প্রথম চালু হয় তখন আমাদের সিয়ামের নির্দেশ ক্রিস্টানদের মতোই ছিল। বুখারী আবু দাউদ ও নাসাঈ প্রভৃতিতে বারা ইবনে আজিব (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে মাগরিবের বাদ ইফতার করার পর পানাহার ও স্ত্রী সহবাস এশা 

রমজানের-পাঁচটি-শিক্ষা-সম্পর্কে-জানুন-বিস্তারিত



পর্যন্ত যায়েদ ছিল। যদি কেউ তারও পূর্বে ঘুমিয়ে পড়তো তাহলে তার ওপর খাওয়া-দাওয়া ও স্ত্রী সহবাস হারাম হয়ে যেত।ওই রাত ও পরেরদিন না খেয়ে সিয়াম অবস্থায় কাটিয়ে মাগরিবের সময় তার জন্য পানাহার হালাল হত। আমাদের দেশে রোজা বলতে মানুষেরা যা বোঝেন তার আরবি প্রতিশব্দ সিয়াম।সিয়াম শব্দের শাব্দিক অর্থ কোন জিনিস থেকে বিরত থাকা।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রমজানের পাঁচটি শিক্ষা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত 

ফরজ রোজার নিয়ত শিক্ষা ও মাসায়েল 

হাফসা বিনতে অমর (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেছেন যে ফজরের পূর্বে সাওমের  নিয়ত করল না কিছু মনে তার সোম নেই। ইমাম নাসাঈ এভাবে বর্ণনা করেছেন ফজরের পূর্বে রাত থেকে সওম আরম্ভ করল না তার সওম নেই। আবু দাউদ ২৪৫৪, তিরমিযী ৭৩০, নাসায়ীঃ হাঃ ৪/১৯৬, ইবনে মাজাহঃ ১৭০০, আহমদ ৬/২৮৭, সহীহ ইবনে খুযাইমাহঃ হাঃ ১৯৩৩)।  
শিক্ষা ও মাসায়েলঃ 
  1. রোজার জন্য নিয়ত করা জরুরী যদি কেউ স্বাস্থ্য রক্ষা, ডাক্তারের পরামর্শ, পানাহার এর প্রতি অনীহা বা অন্য কারণে খাদ্য ও স্ত্রী গমন থেকে বিরত থাকে তারে বিরত থাকা সরয়ি সওম গণ্য হবে না সে এ কারণে সওয়াব পাবে না। 
  2. নিয়ত অন্তরের আমল অতএব যার অন্তরে এ ধারণা হলো যে আগামীকাল সে সওম রাখবে সে নিয়ত করলো।
  3. ওয়াজিব সাওম যেমন রমজান মানত ও কাফফারার ক্ষেত্রে পূর্ব দিন তথা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাওমির নিয়তে থাকা জরুরী। যে ব্যক্তি দিনের কোন অংশে সওমের নিয়ত করলো তার সওম পূর্ণ দিন  ব্যাপী হলো না, তাই তার সোহম শুদ্ধ হবে না। এজন্য ওয়াজিব সাওমে সুবহে সাদিকের পূর্ব থেকে নিয়োগ করার জরুরী। 
  4. রাতের যে কোন অংশে ফরজ বা নফল সওমের নিয়ত করা বৈধ। নিয়ত করার পর সহম পরিপন্থী কোন কাজ করলে নিয়ত নষ্ট হবে না, নতুন নিহতের প্রয়োজন নেই। 

রমজানে পানাহার করার শিক্ষা ও মাসায়েল 

  1. এই হাদিসে কবরের আজাবের প্রমাণ রয়েছে। কবরের আজাব কুরআন সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আহমেদ (রা) বলেন কবরের আজাব সত্য গোমরা ও পথভ্রষ্ট ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না। 
  2. কবরের আজাব শরীর ও রুহু উভয়ের উপর ঘটে যার স্বরূপ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। ইবন কায়িম (র) বলেন "এ উম্মতের পূর্বসূরী ও ইমামদের অভিমত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি নেয়ামত বা আজাবে অবস্থান করে, যা তার শরীরও রুহু উভয় ভোগ করে। শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পর রুহু আরামে বা আজাবে অবস্থান করে। যখন সে শরীরের সাথে মিলিত হয় তখন সে তার সাথে আজাব বা নেয়ামত ভোগ করে। অতঃপর যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন সব রুহু শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আর তারা সবাই কবর থেকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে।" 
  3. রাসুলুল্লাহকে স্বপ্নে কবর আযাবের কত নমুনা দেখানো হয়েছে নবীদের স্বপ্ন সত্য ওহীর অংশ। 
  4. এতে কবর আযাবের কঠিন চিত্র ফুটে উঠেছে মুসলিমদের উচিত কবর আজাবকে ভয় করা তার উপকরণ থেকে বেঁচে থাকা ও তা থেকে সুরক্ষার আসবাব গ্রহণ করা। 
  5. রমজানে যে ব্যাক্তি জেনে ও ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কারণ ব্যতীত সময় হওয়ার পূর্বে ইফতার করে তার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে এই হাদিসে। এটা কবিরা গুনাহ যার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। 
  6. সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতারের যদি এ শাস্তি হয় তাহলে যে রমজানে রোজা রাখে না অথবা কোন কারণ ব্যতীত কয়েক রমজান ইফতার করে সে এরূপ বা তার চেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে সন্দেহ নেই অতএব যার থেকে এরূপ ঘটে তার কর্তব্য দ্রুত তওবা করা যেন তাকে কবরে এ আজাব স্পর্শ না করে। 

রোজাদারদের সুরমা ও মিসওয়াক ব্যবহার করা শিক্ষা ও মাসায়েল 

  1. মিসওয়াকের ফজিলত নবী করিম (সাঃ)প্রত্যেক সালাতের সময় আর নির্দেশ দেয়ার ইচ্ছা করেছেন।
  2. উম্মতের ওপর নবী (সাঃ) এর দয়া যে, তিনি তাদের ওপর কষ্টের বিধান চাপিয়ে দেননি। 
  3. দিনের শুরু ও শেষে রোজাদারদের জন্য মিসওয়াক করা বৈধ। রোজাদার ও গায়রে রোজাদার সবার জন্য মিসওয়াক করা সুন্নাত সবাই হাদিসের ব্যাপকতার অন্তর্ভুক্ত। 
  4. কাঁচা ও শুষ্ক সব মিসওয়াক রোজাদারদের জন্য বৈধ। 
  5. মিসওয়াকের সময় দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে সমস্যা নেই রোজা নষ্ট হবে না তবে রক্ত গলাতকরণ করবে না। 
  6. রোজাদার সুরমা ব্যবহার করতে পারবে অনুরূপ কানও চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারবে যদিও স্বাদ অনুভব হয় ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা বা তার ইঙ্গিত নেই দ্বিতীয়তঃ এগুলো খাদ্যনালী নয়। 
  7. নাকে ড্রপ যদি পেটে যায় তাহলে ভেঙ্গে যাবে কারণ নবী (সাঃ) নাকে বেশি পানি দিতে নিষেধ করেছেন যদি পেটে না পৌঁছে কোন সমস্যা নেই।
  8. ইনহেলার বা হাঁপানির স্প্রে এ জাতীয় বস্তু বা ফুসফুসে যায় রোজাদার ব্যবহার করতে পারবে এতেও কোনো সমস্যা হবে না। 
  9. ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না মাংস বা রগ যেখানে গ্রহণ করা হোক হ্যাঁ খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে। 
  10. রোজাদার যদি খাদ্যজাতীয় ইনজেকশন নিতে বাধ্য হয় তাহলে অসুস্থতার জন্য সে তা নিবে ও পরে রোজাটি কাজা করবে। 
  11. যদি রোজাদার কঠিন ঘ্রাণযুক্ত তেল ব্যবহার করে রোজা ভঙ্গ হবে না কারণ গান যত শক্তিশালী হোক রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। 
  12. অসুস্থতার জন্য ডুস বা সাপটেটরি ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না অতএব রোজা পালনকারীটা ব্যবহার করতে পারবে। 
  13. দাঁতের মাজন রোজা ভঙ্গকারী নয় বরং তা মিসওয়াকের মতই তবে পেটে যেন না যায় সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি যদি অনিচ্ছায় পেটে যায় তবে সমস্যা নেই। 
  14. গড়গড়ার ওষুধের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না যদি তা গলাতকরণ না করে তবে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম। 
  15. মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য এ ব্যবহার করা বৈধ যদি তার মূল ধাতু গলায় না পৌঁছে। 
  16. রোজাদারদের থুতু গলদ করনে সমস্যা নেই নাকের ভিতরে বা কফ গলায় গলাতকরণ বৈধ নয় এগুলো থেকে বিরত থাকা সম্ভব। 
  17. মলদ্বারে শিরিষ দ্বারা সরল পদার্থের প্রবেশ কলারে রোজা ভাঙবে না 

নফল রোজার ফজিলত শিক্ষা ও মাসায়েল 

  1. সাহাবীদের আখেরাতের আমল জানার আগ্রহ। 
  2. রোজা সর্বোত্তম আমল, এই হাদিসটাই প্রমাণ করে,অপর হাদিসে এসেছে যে, সালাত সর্বোত্তম ইবাদত যেমন- "জেনে রেখো, তোমাদের সর্বোত্তম আমল সালাত।"  স্পষ্ট বোঝা যায় আমলে শ্রেষ্ঠত্ব মানুষের অবস্থার উপর নির্ভর করে। কতক মানুষের পক্ষে রোজা উত্তম কারণ রোজা তাদেরকে হারাম প্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে। তাদের অন্তঃকরণে আল্লাহর ইবাদতের জন্য পরিশুদ্ধ করে। আবার কারো পক্ষে সালাত উত্তম কারণ তাদের শরীর রোজা পালনের সক্ষম নয়। রোজার কারণে অন্যান্য কর্তব্য ত্রুটি হবে। ইবনুল কাইয়ুম (র) বলেনঃ "নারীর প্রতি যার আগ্রহ বেশি তার জন্য রোজা উত্তম অন্যান্য ইবাদত থেকে। "
  3. রোজা মানুষ মানুষের প্রবৃত্তিকে নষ্ট করে যা অনেক পাপ সংঘটিত করে এবং ইবাদত থেকে বিরত রাখে। যেসব যুবকেরা বিবাহের সামর্থ্য রাখেনা। কিন্তু তারা পাপের আশঙ্কা করে তাদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিক থেকে রোজার কোন তুলনা বা সমকক্ষ নেই। 
  4. আবু মামা ও তার পরিবার নবী (সাঃ) এর রোজার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বোঝা যায় যে সাহাবায়ে কেরাম শরীয়তের আদেশ দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতেন। 
  5. মেহমানের সম্মান করা ইসলামী বিধান তার সম্মানে নফল রোজা ত্যাগ করা বৈধ। 

তারাবির রাকাত সংখ্যা শিক্ষা ও মাসায়েল 

  1. নবী করিম (সাঃ) এর রাতের রমজান ও গায়রে রমজানে সমান ছিল। 
  2. নবীদের চোখ ঘুমায় কিন্তু তাদের অন্তর ঘুমায় না এজন্য তাদের স্বপ্ন সত্য এটা নবীদের বৈশিষ্ট্য। 
  3. সকল আলেম একমত যে রমজান ও গায়রে রমজানে রাতের সালাত সুন্নত। এতে কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই যার ইচ্ছা কি আমি লম্বা করে রাকাত সংখ্যা কমাবে। যার ইচ্ছা কিয়াম সংক্ষেপ করে রাকাত সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। 
  4. রাতের সালাতে কিরাত রুকু ও সেজদা দীর্ঘ করা নবী (সাঃ) এর সুন্নাত ছোট কিরাতে অধিক রাকাতের চেয়ে দীর্ঘগিরাতে ১১ রাকাত অধিক উত্তম। 
  5. নবী (সাঃ) কখনো ১১ রাকাতের অধিক ১৩ রাকাত পড়েছেন কখনো তিনি এগারো রাকাতের কম সাত বা নয় রাকাত পড়েছেন যেমন অন্যান্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত তবে আয়েশা (রা) নবী করিম (সাঃ) এর সচরাচর সালাতের বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ ১১ রাকাত নিয়মিত পড়া। 
  6. নবী করিম (সাঃ) প্রত্যেক দূর আকাশের পর সালাম ফিরাতেন একসাথে চার রাকাত বা তার অধিক পড়া নবী করিম (সাঃ) এর সচরাচর আমল ও প্রত্যেক দুই রাকাতের পর সালাম ফিরাতেন এক রাকাত দ্বারা বেতর পড়তেন। নবী করিম  (সাঃ) বলেছেনঃ " রাতের সালাত দু'রাকাত"। এটা বেতর ব্যতীত মুসলিম তিন অথবা পাঁচ রাকাত দ্বারা বেতর পড়বে তবে শেষ রাকাত ব্যতীত বসবে না। 
  7. সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী তাবেয়িগণ মদিনার সালাতে তারাবি খুব দীর্ঘ করতেন, যেমন বিশিষ্ট তাবেয়ি আব্দুর রহমান ইবনে হুরমুয (র) উল্লেখ করেছেন। 
  8. সালাতে তারাবির ' দোআয়ে কূনুতে' কাফেদের জন্য বদ দোয়া ও তাদের উপর লানত করা বৈধ। তারা আমাদের চুক্তির অধীনে থাক বা না থাক উপরের কারণে তারা লানতের উপযুক্ত তবে এটা ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে নবী করিম (সাঃ) এর সুন্নাত হচ্ছে যুদ্ধবাজ কাফেরদের জন্য ধ্বংস ও শাস্তির বদ দোয়া করা। 

লেখকের মন্তব্যঃ রমজানের পাঁচটি শিক্ষা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত 

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ উপরোক্ত সবগুলো তথ্য আমি সঠিকভাবে প্রয়োগ করেছি। আমার এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার উপকার হয়ে থাকে তাহলে আর শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। এবং আমার এই পোষ্টটি আপনাদের আপনার কেমন লেগেছে তা মন্তব্য করে জানাবেন ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দিয়া ক্র্যাফট হোম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url